ভীড় থেকে করোনা ছড়ানোর সুযোগ বেশী। একসাথে অনেকে করোনা আক্রান্ত হলে সকলকে চিকিৎসা দেওয়ার পরিকাঠামো সরকারের নেই সেটাও আজ নগ্ন সত্য। দেশে যত টাকা রাজনোইতিক দল গুলি ভোট প্রচারে বা অস্ত্র কিনতে খরচ করে তার খুবই নগণ্য অংশই রাখা হয় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বাজেটে। অল্প বাজেট নিয়ে তাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধসে যাওয়ার মুখে গোটা দেশেই।

তাই করোনা থেকে বাঁচতে একমাত্র উপায় – রোগ থেকে দূরে থাকা। এবং ঘরে বসে থাকা। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে সংসার চলবে না। এমনই দেশের সকল জনগণ যদি একসাথে ঘরে বসে থাকে তাহলে দেশও চলবে না। এমনিতেই দেশের জিডিপি মাইনাসের ঘরে, অনেক পিছনে। তাই বাজার চলতে দেওয়াটাও জরুরী।

সরকারের এখন উভয় সঙ্কট। বাজার বন্ধ করে দাও – সেটাও বলতে পারছে না। আবার সকলকে সুষ্ঠভাবে চিকিৎসা দেবে সেই পথও কঠিন। তাই সব দায় সাধারণ মানুষের। তাদেরকেই বলা হচ্ছে, তোমাকে বাঘের খাঁচায় ছাড়লাম – একটু দূরে দূরে থেকো বাপু।



যাই হোক, তত্ত্ব কথা শেষ হওয়ার নয়। মূল খবর হল, প্রশাসনের দায়িত্ব বাজার হোক কিন্তু যাতে ভীড় না হয়। সেই দায়িত্ব পালনেই এবার স্বয়ং লালবাজার থেকে মাইকিং করে ঘোষণা করা হল নিউ মার্কেট চত্ত্বরে। বলা হলো, বাজার করুন কিন্তু ভীড় করবেন না।

লালবাজার সূত্রের খবর, শহরের যে সব বাজারে প্রচুর ক্রেতার জমায়েত হচ্ছে, সেখানে প্রচার চালাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, হাতিবাগানের মতো ভিড়ে ঠাসা এলাকায় মাইক নিয়ে ওই প্রচার চলছে। সেই সঙ্গে পুলিশের নজর থাকছে মাস্কেও। কেউ মাস্ক না পরলে তাঁকে হয় সতর্ক করে দিচ্ছে পুলিশ, অথবা তাঁকে মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। তা সত্ত্বেও মাস্ক না পরার অভ্যাস দেখা যাচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের মধ্যেই। ফুটপাতের দোকান থেকে বড় দোকান, স্বাস্থ্য-বিধি ভাঙার এই ছবি সর্বত্র।

এই শহরের মধ্য বয়সী প্রায় সকল মানুষের নিঃশ্বাসে সমস্যা আছে। বিষাক্ত বায়ু এবং আবর্জনা ক্রমশ মানুষের শরীরে ঢুকছে প্রতিদিন। করোনার বহু বছর আগে থেকেই। চার-পা হাঁটলেই অথবা দুটো সিঁড়ি চড়লেই মানুষের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। এমতাবস্থায় মাস্ক পরে থাকা আরও কষ্টকর এবং শরীরের পক্ষে আরও ক্ষতিকর। তাছাড়া কলকাতার প্রখর তাপ এবং বাতাসে আদ্রতা থাকার কারণে শরীরে ঘাম। সাধারণ শরীর সম্পর্কে যার সামান্য জ্ঞান আছে তারাই বুঝবে টানা অনেকক্ষন মাস্ক পরে কোনো মতেই থাকা যায় না। হাঁটা চলা করা তো আরও কষ্টকর।



অথচ এখনও মাস্ক পরা নিয়ে ওই সব এলাকায় পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা চলছে। তবে পুলিশের এই প্রচার নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের একটি অংশের। তা হল, নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, শ্যামবাজারে ভিড়ের বাইরে থেকেই মাইকে ঘোষণা করে পুলিশ দায় সারছে বলে অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে লালবাজারের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ঝুঁকি নিয়ে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রতিদিন বাহিনীর অন্তত ২০ জন সদস্য করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। তাই তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব সাবধানতা মেনেই ডিউটি করতে। না হলে তো গোটা বাহিনী একসঙ্গে সংক্রমিত হয়ে যাবে!

তবে সাধারণ মানুষের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে, তারাও পথ চলতে অনেক জায়গায় দেখতে পাচ্ছে দায়িত্বরত অনেক পুলিশই বিভিন্ন সময়ে মাস্ক খুলে কাজ করছেন। কিছু পুলিশ অফ দা রেকর্ডও বলেও ফেললেন, এই গরমে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করতে করতে বেশিক্ষণ মাস্ক পরে থাকাও যায় না।