সালটা ২০১৬। কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির বিরুদ্ধে হার লিয়োনেল মেসির আর্জেন্টিনার। চরম হতাশায় রাজপুত্র ঘোষণা করলেন দেশের হয়ে আর ফুটবল খেলবেন না তিনি। অবাক হয়ে গিয়েছিল বিশ্ব ফুটবল। হতাশ সমর্থকরা।

সালটা ২০২১। ব্রাজিলকে তাদেরই ঘরের মাঠে হারিয়ে ট্রফি জিতল লিয়োনেল মেসির আর্জেন্টিনা। বহু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইল মারাকানা স্টেডিয়াম। আবারও এক ইতিহাস সৃষ্টি হল। এক শাপমুক্তি। আবেগে ভাসল ফুটবল বিশ্ব। আনন্দে মাতোয়ারা সব সমর্থকরা।
রবিবার ভোরে (স্থানীয় সময় শনিবার) দুই দল যখন জাতীয় সঙ্গীতের জন্য দাঁড়িয়ে, মেসির মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই তাঁর মনে কী চলছে। জাতীয় সঙ্গীত শুরু হওয়ার আগে একে অপরের কাঁধে হাত রেখে আরও কাছাকাছি চলে এলেন মেসিরা। গাইতে শুরু করলেন তাঁদের জাতীয় সঙ্গীত। প্রথম আবেগ ফুটে উঠল মেসির মুখে। তাঁকে দেশের জন্য ট্রফি জিততে মরিয়া মনে হল।
খেলার শুরু থেকেই আটকে রেখেছিলেন মেসিকে ব্রাজিলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। তাঁর পায়ে বল গেলেই তিন-চার জন ঘিরে ধরেছেন তাঁকে। বার বার মেসিকে আটকে যেতে দেখা গিয়েছে।
৩২ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের ডিফেন্ডার মারকুইনাসকে আড়াল করে একটা শট নিয়েছিলেন মেসি। তবে তা গোলের মধ্যে রাখতে পারেননি তিনি। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার মুখে জিয়োভানি লো সেলসোকে সঙ্গে নিয়ে ব্রাজিলের বক্সের মধ্যে সুযোগ তৈরি করছিলেন মেসি। তবে আটকে দেন মারকুইনাস।
৬১ মিনিটের মাথায় মেসি ফ্রি কিক থেকে ক্রস তুলেছিলেন। তা থেকে কোনও বিপদ তৈরি হয়নি। ৬৫ মিনিটের মাথায় ফের সুযোগ আসে তাঁদের। মারকুইউনাসের ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। পাশে ছিলেন ফাইনালের এক মাত্র গোলদাতা অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া। কিন্তু তাঁকে বল বাড়াতে পারলেন না আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। সেই ফাঁকটাই দেননি ব্রাজিলের ডিফেন্ডাররা।
গোটা ম্যাচে বার বার আটকে যাওয়া মেসি ৮৯ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের গোলরক্ষক এডেরসন মোরায়েজকে একদম একা পেয়ে গিয়েছিলেন। তাও গোল করতে ব্যর্থ হলেন। ম্যাচের সব চেয়ে সহজ সুযোগ বোধ হয় সেটাই ছিল। রড্রিগো ডি পলের বাড়ানো বল পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। গতিতে ব্রাজিল রক্ষণকে ভেঙে গোলের ছয় গজের মধ্যে চলে আসেন তিনি। সামনে একা ছিলেন এডেরসন। কিন্তু তাঁর শটে কোনও জোর ছিল না। তাই অতি সহজেই বল আটকে দেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক।
ফাইনাল ম্যাচে সেই ভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি মেসি। এ বারের কোপায় ৭ ম্যাচে ৪ গোল তাঁর ঝুলিতে। তবে খেলা শেষের বাঁশি বাজতেই আর্জেন্টিনা যেন মেসিময়। জাতীয় সঙ্গীতের আগে এক হয়ে উঠেছিলেন মেসিরা। ম্যাচ শেষে মেসিকে মাথার ওপর তুলে লোফালুফি করা সকলকে বুঝিয়ে দিল সতীর্থরাও মেসির হাতে ট্রফি দেখার জন্য কতটা মরিয়া ছিলেন।